ঢাকা , শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ , ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​না ফেরার দেশে ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়া

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৮-০৬-২০২৫ ০২:০৭:৩৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৮-০৬-২০২৫ ০৩:২৭:৫০ অপরাহ্ন
​না ফেরার দেশে ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়া ​‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মো. মনু মিয়া । ফাইল ছবি
বিনা পারিশ্রমিকে তিন হাজারেরও বেশি কবর খুঁড়েছিলেন তিনি। পরিচিতি পেয়েছিলেন মানুষের ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ হিসেবে। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সেই মো. মনু মিয়া (৬৭) না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন আজ। 

শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মনু মিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁর ভাতিজা শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি (মনু মিয়া) দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ছয় দিন আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে তাঁকে বাড়িতে আনা হয়।

জীবনভর কবর খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়াল রাখেননি নিঃসন্তান মনু মিয়া। ফলে শরীরে নানা জটিল রোগ বাসা বাঁধে। জানা গেছে, রোগে কাবু হয়ে সম্প্রতি শয্যাশায়ী হন তিনি। গত ১৪ মে তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থতাবোধ করলে তাঁকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে যান।

কারও মৃত্যুসংবাদ শুনেই ঝড়বৃষ্টি কিংবা রাত-বিরাত উপেক্ষা করে খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় খনন যন্ত্রপাতি নিয়ে ছুটে যেতেন মনু মিয়া। জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে এ মহান কাজ করতেন তিনি। একসময় তিনি এ কাজে সময়মতো পৌঁছানোর জন্য দোকান বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন। সে ঘোড়ার পিঠে চড়ে পৌঁছে যেতেন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে। আশপাশের গ্রাম ও জেলাজুড়ে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে। 

ঢাকার আইনজীবী ও এলাকার সন্তান অ্যাডভোকেট শেখ মো. রোকন রেজা জানান, অসুস্থ অবস্থায় তিনি কিছুদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সে সময় দুর্বৃত্তরা তার বহু বছরের সঙ্গী প্রিয় ঘোড়াটিকে হত্যা করে। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

রোকন রেজা বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়ে বলেছিলাম, অনেকে আপনাকে নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চায়। কিন্তু তিনি বলেন, আমি এ কাজ করি শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য। মানুষের কাছ থেকে কিছু নিতে চাই না।

ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর বলেন, ঘোড়ার মৃত্যুর পর থেকেই মনু মিয়া আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও আর আগের মতো হয়ে উঠেননি। তার মৃত্যুতে আমরা এক নিঃস্বার্থ, মহান মানুষকে হারালাম।

স্থানীয়রা জানান, মনু মিয়া শুধু একজন কবর খননকারী ছিলেন না, ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক শোক ও শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে তাকে। তারা বলেন, মৃত্যুর পরও বহু মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন মনু মিয়া।

বাংলা স্কুপ/প্রতিনিধি/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ